মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৩

যুক্তির স্পর্ধিত উদ্দীপনায়...


যুক্তি মানুষের এমন এক চেতনা যার শাণিত শক্তি কুসংস্কারের টুটি চেপে জাগিয়ে তোলে সভ্যতাকে। যুক্তিবাদী মানুষ সমাজকে গড়ে তুলতে পারে আপন আলোর দীপ্তিতেঅসাম্যের অভিশাপকে পরাস্ত করে সাম্যের আবির্ভাব, দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তিকামী চেতনার বড় হাতিয়ার যুক্তি। যুক্তিবাদী জাতি নিজেদের উৎকর্ষের সুউচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠা করার স্পর্ধা রাখে।আজকের সমাজের অন্যায্যতা আর অনাচারের মুলে রয়েছে যুক্তিহীন মানসিকতার কদাকার রূপ। শাসক শ্রেণীর যুক্তিহীন কর্মকাণ্ড আমাদের অগ্রসরতাকে ক্রমাগত করছে বাধাগ্রস্থ । আর আমরাও তখন যুক্তিহীন মানসিকতার দাসত্ব করে চলমান বর্তমানকেই অপ্রিবরতিত বাস্তব হিসেবে মেনে নিয়ে “ এই বেশ ভালো আছি” মানসিকতায় খুঁজে নেয় মেনিমুখো জীবন। যেই জীবন যুক্তির নয় সেই জীবন দাসত্বের । যুক্তিবাদী চেতনায় গড়ে ওঠে বিপ্লবের ভ্রূণ।
যদিও বিতর্ক নামক প্রেরণাটি আজ স্রেফ লোকদেখানো আত্মদম্ভ সমেত বাচ্যিক শিল্প হিসেবে চর্চিত আর সেই সাথে আত্মস্বীকৃতি লভ্যের প্রাবল্যে কিছু যুক্তির ডায়াস কাঁপানো উদগীরণ, অথচ বিতর্ক একটি  সামাজিক আন্দোলন ও বটে।একজন বিতারকিক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাকে সুন্দর করে সাজাতে,বিবদমান পঙ্কিলতা দূর করে নবপ্রভাতের আলো ফোটাতে। একের পর এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেকে, নিজের প্রতিষ্ঠানকে সখ্যাতি আর সুনাম উপহার দেয়ার পাশাপাশি বিতর্ক আন্দোলনের চেতনাকে সমগ্র জাতিতে বিকশিত করার দায়িত্ব ও একজন তার্কিকের উপর বর্তায়। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম এমনটির । পারিনি। কারন আমরা যারা বিতার্কিক আমাদের কেবল বাগ্মিতার বিকাশ ঘটেছে, বোধের  বিকাশ ঘটেনি। আজো আমাদের বিতর্ক আয়োজনের মহারহে নিমগ্ন। আমরা বিতর্ককে মানুষের জন্য করতে পারিনি , করেছি স্বীকৃতির জন্য, করেছি ক্যারিয়ারের জন্য।
বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতে কিছুদিন শিক্ষকতা করার সুবাদে বেশ কয়েকটি গণিত অলিম্পিয়াডে  যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। কেন হুট করে গণিতকে টেনে  নিয়ে আসলাম প্রশ্ন জাগতে পারে। গণিত যেমন মানুষের চিন্তার বিকাশে সহায়তা করে, ঠিক তেমনি বিতর্ক ও মানুষকে ভিন্ন ভাবে ভাবতে শেখায়। চেতনায় আলোড়ন আনে। অথচ গণিত অলিম্পিয়াড আজ যেভাবে দ্বিধাহীন সারাদেশে কাজ করে যাচ্ছে, বিতর্ক সেভাবে পারছে না। কয়েকটি জাতীয় উৎসব মানেই চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়া নয়।একটি গণিত অলিম্পিয়াড যেভাবে ক্ষুদে গণিতবিদদের স্বপ্ন দেখতে শেখাচ্ছে, আবিষ্কারের নেশায় ধাবিত করছে, চিন্তার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করছে, বিতর্ক ও এরচেয়ে কম কিছু করার নয়। অথচ আমরা তা পারছি না। গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজকেরা সম্মিলিত একটি প্ল্যাটফর্মে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে যেটা পারেনি আমাদের দেশের জাতীয় পর্যায়ের বিতর্ক বোদ্ধারা- রথী মহারথীরা, কর্তা ব্যাক্তিরা। “... ডি এফ” , “... ডেমোক্রেসি” আর হাজারো “জাতীয়” সংগঠনগুলোর হীন মানসিক দ্বৈরথে আমরা বিতর্ককে শুধু উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল কলেজগুলোতে গিয়ে বিতর্কের আলো ছড়িয়ে দেয়া, ওদের জন্য কর্মশালা আর প্রতিযোগিতার  আয়োজন করে থানা পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে, বিভাগীয় পর্যায়ে তথা জাতীয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সবার মধ্যে বিতর্কের চেতনা ছড়িয়ে দেয়াটা কঠিন নয়। কেউ যদি বলে ওঠে যে “আমরা তা ঢের করি” তবে স্পর্ধা নিয়েই  বলব সেটা শতভাগ লৌকিক আর অসার। কারন শুধুমাত্র কয়েকটা বিতর্ক উৎসব করে শহুরে সীমাবদ্ধতা আর গা বাঁচানো দায় এড়িয়ে কয়েকটা ঢাকার বাইরের প্রতিষ্ঠান ডেকে নিয়ে প্রোগ্রাম করাটাকে তথাকথিত  জাতীয় সংগঠনগুলোর হিংসাত্মক দৌড়াত্বই বলে, বিতর্কের শৈল্পিক বিপ্লব বলেনা। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আমাদের উচিত বিতর্কের শাণিত প্রজ্বলনে সমগ্র জাতিকে সূচিত করা, যেটা আজ অসম্ভব মনে হলেও আমাদের মেধা, মনন আর ঐক্যের শক্তিতে তা অসম্ভব নয়।
তাই সবার প্রতি আবেদন- মানসিক দূরত্ব ঘুচিয়ে অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ান, দেখবেন- অমানিশার ঘোর কেটে গিয়ে চন্দ্রমল্লিকার তিথি জেগে উঠবে। জয় হবে বিতর্কের। আমরা স্বপ্ন দেখতে পারব একটি সমৃদ্ধ জাতির.........

শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৩

বিচারিক হঠকারিতার অবসান হোক

জেইউডিও...আমার প্রেরণার নাম, আমার চেতনার নাম, আমার দ্রোহের নাম, আমার মেধার নাম, আমার অভিমানের নাম।কোন একজন সাবেক বিতারকিকের একটা স্ট্যাটাস দেখলাম যিনি বলেছেন ". দিনশেষে আমরা ফলাফল নিয়ে খুশি কেন হতে পারছি না? কেন এখনও পরাজিত দল মানতে পারেনা ফলাফল? " খুব সহজে কথাগুলো টাইপ করে স্ট্যাটাসে দেয়া যায়। পরাজিতদের 'উঁহু' বা 'আহা' করে সান্ত্বনা দেয়া যায়। নিজের অবিচল বিচারিক দায়িত্ব জ্ঞান নিয়ে স্পর্ধিত সস্বীকৃত বুলি ছাড়া যায়। বিতর্ক অঙ্গনের নোংরা রাজনীতি থেকে হাত ধুয়ে ফেলা যায় না। 

জেইউডিও তার বিতর্ক নিয়ে অবশ্যই স্পর্ধা করতে পারে কারণ তার সেই মেধা তার শিখরস্পর্শী। তবে আমরা হারলে হার মেনে নিতে পারি। এমন অনেক বছর গিয়েছে যখন সাইফ, আদনান, অপু, স্মৃতি, ইরতেজা, কৌশিক, নুসরাত, আরাফাতরা অনেকদিন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হেরেছে, হার মেনে নিয়েছে, মেনিপুলেটেড ভেন্যুতে বিতর্ক করেছে। তাদের সাফল্যের ঝুড়িতে ক্রেস্ট হয়তো বেশী নেই, কখনো ০.৫ আর ১/১ ব্যালট, কখনো বিতর্কের মানে, কখনো জাজদের আচরণে, স্বজনপ্রীতিতে। তখন জেইউডিও অন্য সবার মতো ভারে কাটত না ধারে কাটত। আর আমাদের ওই অপ্রাপ্তিগুলো , বিভিন্ন জাজদের স্বজনপ্রীতি আর নিচু মানসিকতার হিংস্রতাগুলো জাগরণী শক্তি হয়েছে উত্তরসূরিদের কাছে।

সৈকত, জাফর, রেহনুমা, ফিবা, শুভ, তায়্যেবরা শুধু জাহাঙ্গীরনগরের না, সমগ্র দেশের গর্ব।বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ওরা ওদেরকে প্রমাণ করেছে।JUDO পরাজয় মেনে নিতে পারে, নতুন করে স্পৃহায় উজ্জীবিত হতে পারে, শুধু তথাকথিত বিচারকদের অবিচারিক হঠকারিতা মেনে নিতে পারে না। আমি সব বিচারকের কথা বলছি না।অনেকের বিতর্কের প্রেরনা আর ব্যক্তিত্ব আমাদের আদর্শ। তবে কেউ কেউ আছেন, যারা বিতর্ক করেছেন ঠিকই, তবে আচরণে চেতনাদিপ্ত বিতারকিক না হয়ে আদর্শ বিশ্বস্ত চাটুকার হয়েছেন। তাই তো বিতর্কের মান বিচার করে ফলাফল মুল্যায়ন না করে ব্যাখ্যা ছাড়া মুখ দেখে ক্ষমতাবানদের আনুকূল্য পাওয়ার অভীপ্সায় বিতর্কের ফলাফল দেন।
হাত জোর করি। মানসিকতার পরিবর্তন করুন। দেখবেন বিতর্কের জয় হবে। কেবল স্ট্যাটাস দেয়ার পর লোকদেখানো “ বিতর্কের জয় হোক” না লিখে এটাকে বুকে ধারণ করেন।JUDO হয়তো হারতে জানে, তবে বিতর্কের মান অবশ্যই এই সাক্ষ্য দেবে যে, অফুরন্ত সাফল্যের নুড়িগুলো JUDOএর আগমনী দিনের পথে ছড়িয়ে আছে।
বিতর্কের জয় হোক, জয় বাংলা।