শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৩

অনুভূতির নুড়িগুলো..

বিতর্ক শব্দটা শুনলেই আগে কেমন যেন ভয়ে হাত পা কেঁপে উঠত। সবার সামনে দাড়িয়ে ২ মিনিট কথা বললে যতটা নার্ভাস হয়ে ঘাম ঝরবে বলে মনে হতো, মনে হয় খ্যাতিমান কোনো কুস্তীগিরের সাথে কুস্তী করতে গেলেও এতোটা নার্ভাস হোতাম না। আজ আমি গর্বিত হয়ে উচ্চারণ করি- আমি একজন বিতারকিক। আমার কণ্ঠে যুক্তির সুর তুলেছে জেইউডিও।আমার বধির সত্ত্বাকে যুক্তির ঝংকার শুনিয়েছে জেইউডিও। আমার ম্রিয়মাণ পদদলিত স্বপ্নগুলোকে ইচ্ছের ডানায় ভর করে উদার আকাশে ওড়ার প্রেরণা দিয়েছে জেইউডিও।

মামুন ভাই, কেমন যেন বেশ অহংকারী মানুষ লাগতো জাকে। এত বেশি ভাব মারতো! ভয়ানক তুখোড় তার্কিক। কখনো ধারে কাছে ঘেঁষতে পারব কিনা দ্বিধা ছিল, তার মতো তার্কিক হওয়ার স্বপ্ন তো অনেক দূরের কথা! হুট করে কখন যেন "দেখি কতো সুখি দম্পতী হাসিমুখে বাস করে শহরের ম্যানশন গুলোয়, আর হাসি মাখা এ শহরই আমাকে ছাড়িয়ে ঘর নামিয়েছে পথের ধুলোয়" গানটি গাইতে গাইতে আমার কাঁধে হাত রেখে নিজের ভাইয়ের মতো আপন করে নিলো আমায় এই মানুষটি। মামুন ভাই, আমার আইকন। অনেক প্রশংসা শুনেছি অনেকের কাছে নিজের বিতর্ক নিয়ে। সবচেয়ে প্রেরণা পেয়েছি তখন যখন এই মানুষটি আমার বিতর্ক নিয়ে কোনো কথা বলেছেন। আমার স্পৃহার আধার মামুন ভাই।

খুব ছোটখাটো সুদরসন তবে পোংটা টাইপের একটা ছেলেকে মাঝে মাঝে দেখতাম হলে। টিটি খেলতে খেলতে এমন কিছু এক্সপ্রেশন দিত মেজাজ ব্যাপক খারাপ হতো। দেখে বোঝাই যেতনা যে এই মানুষটা নাকি আমাদের সিনিয়র।কখন যেন এই মানুষটি ক্যাম্পাসে আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে গেলো। আমার বিতর্কের সরাসরি শিক্ষক, বিতর্কের প্রতিটি যুক্তি, সব্দ, অক্ষর জার কাছ থেকে আমার শেখা- অপু ভাই। আমার ক্যাম্পাস লাইফের গার্জিয়ান। প্রথন যখন বাইরে বিতর্ক করতে জেতাম, এই মানুষটির কাছে হাতে কলমে প্রতিটি বিতর্কের আগের দিন ধর্না ধরতাম। আমার বিতর্কের অ আ আমি অপু ভাইয়ের কাছ থেকে শিখেছি। কতো খুনসুটি, কতো অভিমান, কতো হাসি, কতো বিরাগ, তাসের আসরে উল্লাস, কখনো বা ভয়ানক মন কষাকষি। এই নিয়ে ছিল আমার ভুবন।

প্রোগ্রাম শেশে বটতলায় খাওয়া শেশ করে গান গাইতে গাইতে যখন হলে ফিরতাম এমনি একদিনে আবিষ্কার করলাম মুস্তাফিজ ভাই( মুস্তা বন্ধু) কি জিনিস। আগে ওনাকে বেশ কনজারভেটিভ মনে করতাম। কখন যেন জেইউডিওই তার সাথে আমার আত্মিক বন্ধনটা অটুট করে দিয়েছে। সাংগঠনিক ভাবে এই মানুষটি যখন জেইউডিও এর কর্ণধার, তখনই আমি কার্যনির্বাহী কমিটিতে কাজ সুরু করি। মুস্তাফিজ ভাই, আমার সাংগঠনিক গুরু।

রাজন দা কে তার ছাত্রাবস্থায় খুব কাছে থেকে পাইনি। তবে জেইউডিও এর মাধ্যমে তার কাছ থেকে পেয়েছি অনাবিল স্নেহ, সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা। ব্যক্তিত্বে অবিচল রাজন দা ছিলেন সত্যিকার ভাবেই অনুকরণীয়।

আদনান ভাই। কিছুটা পাগল গোছের রাগি মানুষ। অথচ ঐ রাগের মধ্যে যে কতটা প্রেরণা, স্নেহ, ভালোবাসা ছিল তা বলে বোঝাবার নয়। এক কথায় আমার কাছে মামুন ভাই আর অপু ভাইয়ের যোগফল হলেন আদনান ভাই। অনুসরনিয় বিতারকিক।অনুকরণীয় জ্ঞানের আধার।

সাইফ ভাই, যে মানুষটি আমার মতো হাজারো বিতারকিকের কাছে বিতর্কের ব্রায়ান লারা। কখনো কোনো অহমিকার লেশ মাত্র কিছু তার মধ্যে পাইনি। এরকম ভাল মানুষ এখনকার যুগে সত্যিই অনেক কম নয় প্রায় শূন্য।

হীম। আমার সভাপতি, হার হাত ধরে, জার কাঁধে কাধ মিলিয়ে ক্যাম্পাসে প্রথম বিতর্কের সাথে তথা সংগঠনের সাথে জুক্ত হওয়া। সৃষ্টিশীলতায় ভাবতে শেখা। সূর্যকে হাতের মুঠোয় ধরার স্পর্ধা। এমন অনেক দিন ছিল আমরা ২৪ ঘণ্টা একসাথে। জানি তা আজ স্রেফ অতীত। গণিতের মতো জন্মান্ধকে জ্যোৎস্নার দৃশ্য দেখাবার যুদ্ধে যার সহযোদ্ধা আমি। অনড় শ্রদ্ধায় কখনো দেবতা, নিদারুণ অভিমানে কখনোবা অপদেবতা।আমার স্মৃতির আকাশের এক অবিনশ্বর নক্ষত্র হীম।

মেহেদী। আমার শক্তি, আমার সহকর্মী, আমার সতীর্থ। যার সাথে ঝগড়াটা খুব বেশি হয়েছে, আর জাকে ফীলটাও অনেক বেশি করেছি। অভিমানে কথা বন্ধ আবার জেইউডিওকে ভালোবেসে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া। আমার অভিমানের পেয়ালা, অনুযোগের গড়ল। আমার আধ- খাওয়া সিগারেটের পার্টনার, আমার জেইউডিও পরিবারের পিঠাপিঠি ভাই, আমার শক্তি, আমার যন্ত্রণা, আমার স্মৃতিকাতরতা মেহেদী।

আমার রুমমেট সিউল। আমার আজীবনের সিগারেটের পার্টনার। আমার দুঃখ- বেদনার জমা রাখা থলে সিউল। আমার ক্যাম্পাস জীবনের প্রথম বন্ধু, যে আমাকে সবচেয়ে বেশি জানে, আমাকে বোঝে, আমার উপলব্ধিতে যে চির অমলিন।গণিতের পাথুরে বুকে যুক্তির ফুল ফোটানো কারিগর, আমার সহযোদ্ধা সিউল।

ইরতেজা। আমার সবচেয়ে প্রিয় বিতারকিক, যার কাছে অনেক শিখেছি। যার সাথে বিতর্ক করাটা আমার বিতর্ক জীবনের সর্বাধিক ভালো লাগা, জেইউডিও এর বিতর্কের প্রাণ এই মানুষটি।
মামুন ভাই, রাজন দা, মুস্তাফিজ ভাই, অপু ভাই,বন্ধু সৈকত, সায়ের ভাই,আদনান ভাই রা জেইউডিও এর যদিও প্রতিষ্ঠাতা তবে যাদের মাধ্যমে JUDO প্রাণ পেয়েছে হীম, সিউল, মেহেদী, তাঞ্জিল, রাজীব, ইরতেজা,সুজন ভাই- এরা আমার সতীর্থ এ আমার গর্ব।

আজ বাস্তবতার ভীরে মিশে গিয়ে আমাদের বৃত্তীয় বিন্দুগুলি অনেক দূরে সরে গিয়েছে। আর কখনো ফিরে পাবনা আড্ডা মুখর, বিতর্কে ভরপুর সেই দিনগুলি। আর ফিরে আসবে না হয়তো সেই চায়ের চুমুক, সেই গান, সেই ডায়াস, সেই আধ-খাওয়া বেনসন। তবে আমার ক্ষুদ্র জীবনের প্রচ্ছদে সপ্তবর্ণে বর্ণীল থাকবে এই স্মৃতি, এই মুখগুলি।
কি জানি আবার কি জম্বে মেলা, নাকি বিরুদ্ধ সময় আমাদের আর বেশি দূরে ঠেলে দেবে!

আমার জেইউডিও আমার প্রেরণার নাম, আমার বেদনার নাম, প্রেরণা তো আছেই, সেই সাথে থাকুক না কিছু বেদনা। আমার মিল্ব সবাই। অনুজদের কাছে প্রত্যাশা- একটা আড্ডা জমিয়ে আবার একটিবারের জন্য হলেও ফিরিয়ে এনো অতীতকে।

তোমাদের অনেক মিস করি, মিস করি আমার জেইউডিওকে। ভালো থাকো জেইউডিও