মানুষের কথা



কোটা প্রথা-শোষণ-সংগ্রাম

কোটা প্রথা বাতিলের আন্দোলনটা আসলে আমাদের চিত্তের সংগ্রামী চেতনা,ইতিহাসের অনির্বাণ দৃষ্টান্ত। আসলে আমাদের ইতিহাসের সব আন্দোলনই এই কোটার বিপরীতে। হয়তো আজকের কোটাটি চাকরির অধিকার সম্বন্ধীয়, আর ১৮৫৭, ১৯০৫, ১৯২৬, ১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৬২,১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০, ২০০৭ সব গুলো সংগ্রাম ছিল সুবিধাবাদীদের বিরুদ্ধে , অস্বাভাবিক বৈষম্মের বিরুদ্ধে, অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে।

প্রশ্নটা হলো-সরকার ব্রিটিশ, পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী যত রকমেরই হোক না কেন স্বার্থ-ক্ষমতা-শোষণ-গদি এসব কিন্তু যুগ যুগ ধরেই অভিন্ন।তাই আমাদের মতো নিপীড়িতের স্বীয় অধিকার প্রতিষ্ঠায় বার বার সংগ্রামী হয়ে ওঠাটাও ঐতিহাসিক শৌর্য। জানিনা এখন আবার আমরা সবাই কেন অনেকটা নিভে নিভে গেলাম। মিডিয়াতেও এখন আর এ বিষয় নিয়ে কোনো সারা-শব্দ নেই।

ঘুরে দাঁড়ানোটা সময়ের দাবী। যদি এখন কেউ আবার ফলাফল শিটে নিজের নাম খুঁজে পেয়ে ঐতিহাসিক মিরজাফরিও বা গোলাম আজমিও চেতনায় ভর করে আন্দোলনের প্রকৃত দাবী ভুলে গিয়ে রিটেনের প্রিপারেসনের নামে আত্মস্বার্থে নিমগ্ন হন তবে আমাদের বিবেক মুখ থুবড়ে পরবে। আমাদের চেতনার মেরুদণ্ড ভঙ্গুর হয়ে যাবে।

অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা আবশ্যক সত্যি, তবে সেটা ৫৫ঃ৪৫ নয় অথবা প্রহসনের ৫০ঃ ৫০ ও নয়। যদি পিছিয়ে পরার বিচারেই চিন্তা করতে হয় তবে তো আমাদের ১০০% কোটা থাকা উচিৎ ছিল। যুগ যুগ ধরেই আমরা পশ্চাৎপদ। কোটা সিস্টেম কখনই ৩০% এর বেশী থাকতে পারে না। বর্তমানে যারা কোটা সুবিধায় আছেন তারা অবশ্যই সেটা পাবার অধিকার রাখেন তবে
অনুপাতটা কমানো জুরুরি।

আমরা যারা বৈষম্মের পতন চাই তাদের ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে একসুত্রে থেকে আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মিছিলে সমস্বরে শ্লোগান তোলা, হাতে হাত রেখে সংগ্রামী দৃষ্টিভঙ্গিতে অবিচল থাকাটা আবশ্যক।আমরা আশ্বাস দেবো ভবিষ্যতকে-
" পরশু ভোর ঠিক আসবে- সেই আশাবাদ তুমি ভুলনা"
জীবনের মান স্রেফ যখন শুধুমাত্র গণনায় মুল্যায়িত। লাশের সংখ্যা কতো? কেউ একজন বলল ১৩০। আরেকজন বলল না,১৫০। পাশ থেকে আরেকজন বলল ওই একই কথা। ২০ টা হিসাবের হেরফের তো খুব বড় কিছু না। অবাক লাগে। মৃত্যু আমাদের দেশে সবচেয়ে সহজলভ্য প্রাপ্তি। একেকটা প্রাণের মৃত্যুর বিভীষিকা আজ আঙুলের কড়া গুনে "গভীর শোক প্রকাশ", "লজ্জিত জাতি" এসব ভ্রান্তির ছলনাময় সান্তনার বানীতে বিপন্ন।

এই মানুষটির উপার্জনে গোটা একটা পরিবারের ভবিষ্যৎ নিরভর করে, নিমেষে সে শামিল হয় মৃত্যু মিছিলে। কখনো আগুনে পুড়ে, কখনো জলে ডুবে আবার কখনোবা ভবন ধ্বসে। ঝরে যাওয়া জীবনের দাম হয়তো কখনো মেলে তথাকথিত অনুদানে। আর কতদিন! মৃত্যু অমোঘ সত্যি। তবে আমাদের দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এমন যে মৃত্যুকে আয়োজন করে নিয়ে আসা হয়। মৃত্যু তার স্বেচ্ছাচারিতায় বেঁছে নেয় হাজারো প্রাণ। বিশেষকরে শ্রেণীহীন মানুষের প্রাণের প্রতিই বেশী লোভাতুর দৃষ্টি মৃত্যুর।

স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা আমাদের দেশে অনিশ্চিত। এই দায় কার!!!কে এই নিশ্চয়তা দেবে আর কোনো তাজরিন গার্মেন্টস এ ঘটবে না অগ্নিকান্ড , ঝলসানো তৃপ্তির উন্মাদনায় মৃত্যু গ্রাস করবে না একটিও প্রাণ। আর কোনো রানা প্লাজা ধ্বসবেনা । আর কোনো তাজা প্রাণ মুহূর্তে শামিল হবে না লাশের মিছিলে।

"প্রতিটা জীবনকে বাঁচতে দিতে হবে, আর কোনো সকাল শুরু হবে না মৃত্যু-যন্ত্রণার আর্তনাদে"। এই স্বপ্ন হয়তো বিলাসিতা!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন